time
Welcome to Our Website!

নারীর বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার নিয়ে আইন যা বলে

 নারীর বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার নিয়ে আইন যা বলে

Home

নারীর বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার নিয়ে আইন যা বলে

Digont NewsFebruary 20, 20250

 


নারীর বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার নিয়ে আইন যা বলে


নারীদের তালাক দেওয়ার অধিকার নিয়ে সমাজে নানা ভুল ধারণা রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, শুধু পুরুষেরই তালাক প্রদানের অধিকার রয়েছে, কিন্তু বাস্তবে ইসলামি শরিয়ত ও দেশের পারিবারিক আইন নারীকে নির্দিষ্ট শর্তে তালাকের অধিকার প্রদান করেছে। ইসলামে বিবাহ একটি চুক্তি, যা পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে স্থাপিত হয়। ঠিক তেমনি, যখন বৈবাহিক জীবন টেকসই থাকে না, তখন সেই সম্পর্কের সমাপ্তির ব্যবস্থাও শরিয়তে রয়েছে। পুরুষ সরাসরি ‘তালাক’ উচ্চারণের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে পারেন, তবে নারীর ক্ষেত্রেও কিছু বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে।

কুল (খুলা) – নারীর বিচ্ছেদের অধিকার ইসলামে স্ত্রী যদি স্বামীর সঙ্গে সংসার করা কঠিন মনে করেন এবং বৈধ কারণে বিবাহবিচ্ছেদ চান, তবে তিনি ‘খুলা’ বা ‘কুল’ নিতে পারেন। খুলার ক্ষেত্রে স্ত্রী তার দেনমোহর বা কোনো আর্থিক সুবিধা ফিরিয়ে দিয়ে স্বামীর অনুমতির মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদ চাইতে পারেন। এটি মূলত স্বামী কর্তৃক সম্মতিপ্রাপ্ত তালাক




তফউইজ তালাক (তালাকের ক্ষমতা অর্পণ)



কোনো পুরুষ তার স্ত্রীকে তালাকের ক্ষমতা প্রদান (তফউইজ তালাক) করতে পারেন, যা সাধারণত কাবিননামার শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা যায়। এতে স্ত্রী নিজেই তালাক দেওয়ার অধিকার পেয়ে যান।


ফাসখ – আদালতের মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদ


যদি স্বামী তালাক দিতে অস্বীকৃতি জানান এবং স্ত্রী বৈধ কারণে বিবাহবিচ্ছেদ চান, তবে তিনি কাজী বা আদালতের মাধ্যমে বিচ্ছেদের আবেদন (ফাসখ) করতে পারেন। এটি বিশেষত তখন কার্যকর হয়, যখন স্বামী স্ত্রীকে যথাযথ অধিকার দিচ্ছেন না, শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করছেন, ভরণ-পোষণ দিচ্ছেন না, বা নিখোঁজ রয়েছেন।



বাংলাদেশে নারীর তালাকের আইনগত অধিকার


বাংলাদেশের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ (Muslim Family Laws Ordinance, 1961) নারীদের তালাকের অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে।


(ক) কুল বা খুলা


যদি কোনো স্ত্রী তার স্বামীর সাথে আর সংসার করতে না চান, তবে তিনি খুলা মামলা করতে পারেন। এটি স্বামীকে কিছু দেনমোহর ফেরত দেওয়ার মাধ্যমে কার্যকর হয়।


খ) আদালতের মাধ্যমে তালাক (ফাসখ)


বাংলাদেশের পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ, ১৯৮৫ (Family Court Ordinance, 1985) অনুযায়ী, স্ত্রী আদালতে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য আবেদন করতে পারেন। আদালত যদি মনে করে, বৈবাহিক সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়, তবে বিচ্ছেদের আদেশ দিতে পারে।



(গ) নোটিশ ও নিবন্ধন


বাংলাদেশের পারিবারিক আইনে বলা হয়েছে, তালাকের ক্ষেত্রে তিন মাসের নোটিশ বাধ্যতামূলক। স্বামী বা স্ত্রী যদি তালাক দেন, তবে তাকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ বা সিটি করপোরেশনে তালাকের নোটিশ পাঠাতে হবে।


৩. অন্যান্য ধর্মের নারীদের বিচ্ছেদের অধিকার


বাংলাদেশে মুসলিম ছাড়াও হিন্দু, খ্রিষ্টান ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বসবাস করেন।


হিন্দু আইন অনুযায়ী সাধারণত বিবাহবিচ্ছেদ অনুমোদিত ছিল না। তবে কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে হিন্দু নারীদের বিবাহবিচ্ছেদের অধিকার দিয়েছে হিন্দু বিবাহ আইন, ২০১৭।


হিন্দু বিবাহ বিধিতে বিবাহ-বিচ্ছেদের জন্য আবেদন করা যেতে পারে এবং উপযুক্ত কারণ দেখাতে পারলে আদালত তা মঞ্জুর করতে পারে। কিন্তু বিবাহ হওয়ার পর থেকে তিন বছরের মধ্যে এই আবেদন করা চলবে না। নিম্নলিখিত কারণগুলি উপযুক্ত কারণ হিসেবে গণ্য করা হবে:



১. স্বামী বা স্ত্রী ব্যভিচারে লিপ্ত হলে।


২. ধর্মান্তর গ্রহণ করে আর হিন্দু না থাকলে।


৩. আবেদনের প্রাক্কালীন তিন বছর ধরে স্বামী বা স্ত্রী কেউ যদি মস্তিষ্ক বিকৃতিতে বা আরোগ্যের অতীত কুষ্ঠ ব্যাধিতে, কিংবা সংক্রামক যৌনব্যাধিতে ভুগলে।


৪. স্বামী বা স্ত্রী সংসার ত্যাগ করলে বা কোনও ধর্ম-সম্প্রদায়ে যোগ দিলে।


৫. স্বামী বা স্ত্রীর কেউ সাত বছর নিরুদ্দিষ্ট থাকলে।


৬. আদালত কর্তৃক আলাদা হয়ে থাকার হুকুমনামার (জুডিশিয়াল সেপারেশন) পর উভয়পক্ষ আর স্বামী-স্ত্রী রূপে সহবাস না করলে।



৭. আদালত দাম্পত্য-জীবন পুনপ্রতিষ্ঠা (রেস্টিট্যুশন অফ কনজুগাল রাইটস) হুকুম দেওয়া সত্ত্বেও, হুকুম অমান্য করে দুই বছর আলাদা বাস করলে।


৮. স্বামী যৌন-অত্যাচার করলে।


৯. স্ত্রী বর্তমান থাকা সত্ত্বেও অন্য কাউকে বিবাহ করলে। (যদিও সেই দ্বিতীয়বিবাহ অসিদ্ধ, কিন্তু এটিও বিবাহবিচ্ছেদে আবেদনের একটি উপযুক্ত কারণ)।



১০. দুজনের সম্মিলিত ইচ্ছা।


আদালতে যদি বিবাহ-বিচ্ছেদের নির্দেশ দেয় (এবং তার বিরুদ্ধে কোনও আপিল না করা হয়), তাহলে এক বছর অপেক্ষা করার পর উভয়পক্ষই আবার বিবাহ করতে পারেন।


প্রসঙ্গত, বিবাহ-বিচ্ছেদের নির্দেশ পাওয়ার আগে যদি স্ত্রী গর্ভবতী হন, তাহলে সেই সন্তান স্বামীর বৈধ সন্তান বলে গণ্য হবে।


খ্রিষ্টান পারিবারিক আইন অনুযায়ী, নির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে খ্রিষ্টান নারীরা আদালতের মাধ্যমে বিচ্ছেদ চাইতে পারেন।



নারীদের তালাকের অধিকার ইসলামে স্বীকৃত এবং বাংলাদেশের আইনেও তা প্রতিষ্ঠিত। যদিও পুরুষ সরাসরি তালাক উচ্চারণের মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাতে পারেন, নারীরা আদালতের মাধ্যমে বা খুলার মাধ্যমে তালাকের আবেদন করতে পারেন। সুতরাং, নারীদের তালাকের অধিকার রয়েছে, তবে সেটি নির্দিষ্ট শর্ত ও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কার্যকর হয়।


লেখক: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

Countdown Timer
00:01

Post a Comment

Previous Post Next Post