ভূমিকম্পে ভয়ঙ্কর ঝুঁকিতে ১৫ এলাকা
ঢাকাবাসী ভূমিকম্পের ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে বাস করছেন। সুউচ্চ ভবন ও কংক্রিটের এ নগরীতে অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে খোলা জায়গা তেমন নেই বললেই চলে। ঢাকায় ভবনগুলো একটির গায়ে আরেকটি লেগে আছে। বড় ভূমিকম্পে এ শহরে খোলা জায়গায় নিরাপদ আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ নেই। একইভাবে ভূমিকম্প-পরবর্তী উদ্ধার কাজেও হতাহতদের উদ্ধারে বেশ বেগ পেতে হবে। ঢাকার কমবেশি বেশির ভাগ এলাকাই ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তবে এর মধ্যে ১৫টি এলাকা ভয়ংকর ঝুঁকিতে আছে।
বিজ্ঞানভিত্তিক বিখ্যাত গবেষণাধর্মী প্ল্যাটফর্ম সায়েন্স ডাইরেক্টে প্রকাশিত ‘এন এসেসমেন্ট অব ফিজিক্যাল এসপেক্টস ফর সিসমিক রেসপন্স ক্যাপাসিটি ইন ঢাকা বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের জিআইএস ডাটাবেজ তথ্য ব্যবহার করা হয়। এ গবেষণায় ঢাকার যে ১৫ এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলো হলো- সবুজবাগ, কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ, কাফরুল, ইব্রাহিমপুর, কল্যাণপুর, গাবতলী, উত্তরা, সূত্রাপুর, শ্যামপুর, মানিকদী, মোহাম্মদপুর, পল্লবী ও খিলগাঁও। ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড না মানা, পুরোনো জরাজীর্ণ বিল্ডিং, অতিরিক্ত মানুষের বাস, একটির সঙ্গে লাগানো আরেকটি ভবন, এলাকায় বিপজ্জনক দাহ্য পদার্থের গোডাউন, ভালো যোগাযোগব্যবস্থার অভাব, পর্যাপ্ত খোলা স্থানের অভাব, হাসপাতাল না থাকা এবং ভূমিকম্পের পরে সহজে উদ্ধারকাজ করতে না পারার বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে এ তালিকা তৈরি করা হয়েছে। গবেষণাটি বলছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তৈরি করা ভবনগুলোর নির্মাণসামগ্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটির নির্মিত ভবনগুলোর চেয়ে মজবুত। ঢাকার মোট ৩২টি এলাকার ওপর এ জরিপ চালানো হয়। এগুলো হলো উত্তরা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, পল্লবী, মানিকদী, মিরপুর, খিলক্ষেত, কল্যাণপুর ও গাবতলী, কাফরুল ও ইব্রাহিমপুর, গুলশান, মোহাম্মদপুর, শেরেবাংলা নগর, মহাখালী, বাড্ডা, তেজগাঁও, রামপুরা, ধানমন্ডি, মগবাজার, খিলগাঁও, হাজারিবাগ, নিউমার্কেট, আজিমপুর, শাহবাগ, রমনা, পল্টন, মতিঝিল, সবুজবাগ, কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ, বংশাল, যাত্রাবাড়ী, সূত্রাপুর ও শ্যামপুর। এর মধ্যে ঢাকার দক্ষিণ অংশের কামরাঙ্গীরচর, হাজারিবাগ এবং সবুজবাগ এ এলাকাগুলো বেশ পুরোনো। এসব এলাকার রাস্তাঘাট বেশ সংকীর্ণ, ভবনগুলোও বেশ পুরোনো। ঘনবসতিও বেশি। ভূমিকম্পে এসব এলাকায় ক্ষয়ক্ষতিও বেশি হবে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এমনকি ভূমিকম্প-পরবর্তী উদ্ধার কার্যক্রম চালাতেও এসব এলাকায় হিমশিম খেতে হবে। আবার সূত্রাপুর, শ্যামপুর এলাকাগুলো ভূমিকম্পের জন্য উচ্চঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। এসব এলাকায় মানুষের বসতি বেশি। খোলা জায়গাও নেই। ভবন ও অবকাঠামোগুলোও বেশ পুরোনো।
ঢাকার উত্তরে কাফরুল, ইব্রাহিমপুর, কল্যাণপুর ও গাবতলী ও মানিকদী ভয়াবহ ঝুঁকিতে আছে। এসব এলাকার রাস্তাঘাট বেশ সংকীর্ণ। খোলা জায়গাও বেশ কম। আবার পল্লবী এলাকায় কম হাসপাতাল থাকায় এটি ভূমিকম্পের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। মোহাম্মদপুর ও উত্তরায় খোলা জায়গা না থাকায় সেখানে ভূমিকম্পের ঝুঁকি আছে। খিলগাঁও এলাকাটি ঝুঁকির মধ্যে আছে।
তবে পরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে গুলশান এলাকায় ভূমিকম্পের ঝুঁকি কম। সেখানে রাস্তাঘাটও বেশ প্রশস্ত। রমনা, শাহবাগ, আজিমপুর এসব এলাকাতেও ঝুঁকি কম। কারণ সেখানে রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মতো খোলা জায়গা আছে। লালবাগ এলাকায় লালবাগ কেল্লা থাকায় এর ঝুঁকিও কম। একইভাবে ঢাকার ধানমন্ডি, শাহবাগ এবং শেরেবাংলানগর এলাকায় ঝুঁকি কম। এসব এলাকায় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল থাকায় ভূমিকম্প-পরবর্তী সেবা নিতে সহজ হবে। মতিঝিল, আজিমপুর এলাকাগুলোয় ঝুঁকি কিছুটা কম। কারণ এগুলো পরিকল্পিত এলাকা। আবার নিউমার্কেট এলাকার আশপাশে বিশ্ববিদ্যালয় ও খোলা জায়গা থাকায় এর ঝুঁকিও কম।

Post a Comment