কাজী নজরুল

 

কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের এক বিস্ময়কর প্রতিভা, যিনি কাব্য, সংগীত, নাটক, প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস এবং সাংবাদিকতা—প্রায় প্রতিটি শাখায় তাঁর শক্তিশালী অবদান রেখেছেন। তাঁকে বলা হয় "বিদ্রোহী কবি", কারণ তাঁর লেখায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, শোষিত মানুষের পক্ষে উচ্চারণ এবং সাম্যবাদী চিন্তাধারার দৃঢ় প্রকাশ ঘটেছে। নজরুলের লেখায় একইসাথে রয়েছে বিপ্লবের জোয়ার ও প্রেমের কোমলতা, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও মানবতাবাদ।


জন্ম ও শৈশব


কাজী নজরুল ইসলাম জন্মগ্রহণ করেন ১৮৯৯ সালের ২৪ মে, পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে। ছোটবেলায় পিতৃহারা হওয়ায় তাঁকে অর্থনৈতিক কষ্টের মুখোমুখি হতে হয়। তিনি একসময় লেটো দলে কাজ করেছেন, যেখানে গান ও নাটকের মাধ্যমে জীবিকা চলত। এখান থেকেই তাঁর সৃজনশীলতার সূচনা হয়।


সাহিত্যকর্ম


নজরুলের সবচেয়ে বিখ্যাত কবিতা "বিদ্রোহী", যা ১৯২২ সালে প্রকাশিত হয়। এই কবিতায় তিনি বলেন:


"বল বীর –

বল উন্নত মম শির!"


এই কবিতা শুধুমাত্র একটি কাব্যিক স্লোগান নয়, বরং সমগ্র উপমহাদেশের নিপীড়িত মানুষের জন্য এক প্রেরণার উৎস হয়ে ওঠে। তাঁর রচনায় হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের বার্তা ছিল অত্যন্ত প্রবল। তিনি ছিলেন এমন একজন কবি যিনি কোরআন ও গীতা উভয়কেই সম্মান করতেন এবং তাঁর লেখায় উভয়েরই প্রভাব লক্ষণীয়।


সংগীত ও নজরুলগীতি


নজরুল ছিলেন একজন অসাধারণ সুরকার ও সংগীতশিল্পী। তাঁর রচিত নজরুলগীতি এখনো বাংলার ঘরে ঘরে গীত হয়। এসব গানে প্রেম, দুঃখ, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, বিদ্রোহ এবং দেশপ্রেম—সবকিছুরই এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটে।


রাজনৈতিক ও সামাজিক চিন্তাধারা


ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে নজরুলের লেখনী ছিল অত্যন্ত তীব্র ও জোরালো। তাঁর কবিতা ও প্রবন্ধ ব্রিটিশ সরকারকে এতটাই বিচলিত করেছিল যে তাঁকে কারাবরণ করতে হয়। জেলখানায় থাকাকালীনও তিনি অনশন ধর্মঘট করেছিলেন।


অসুস্থতা ও মৃত্যুর পরিণতি


১৯৪২ সালে নজরুল এক রহস্যজনক রোগে আক্রান্ত হয়ে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন এবং আজীবন নির্বাক থেকে যান। পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকার ১৯৭২ সালে তাঁকে ঢাকায় নিয়ে আসেন এবং জাতীয় কবির মর্যাদা প্রদান করেন। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয় এবং তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে সমাহিত করা হয়।


উত্তরাধিকার


কাজী নজরুল ইসলাম শুধু একজন কবিই নন, তিনি বাংলা জাতিসত্তার এক শক্তিশালী রূপকার। তাঁর বিদ্রোহী সত্তা, মানবতাবাদী দর্শন এবং অসামান্য সাহিত্যকর্ম যুগের পর যুগ ধরে বাঙালির অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।


তুমি কি তাঁর কোন নির্দিষ্ট রচনা বা দিক নিয়ে আরও বিস্তারিত জানতে চাও?

রিডাইরেক্ট করা হচ্ছে...

আপনাকে শীঘ্রই অন্য পাতায় পাঠানো হবে। যদি পাঠানো না হয়, তাহলে এখানে ক্লিক করুন

Comments

Popular posts from this blog

ইনজেকশন পুশের ৫ মিনিটের মধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন বিনয়

ব্রেকিং নিউজ: দিল্লিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে জাতিসংঘের টিম বৈঠক, দেশে ফেরার আশ্বাস

মৃ’ত্যু’র আগে চারটি কথা বলে গেছে আছিয়া, সত্যের পর্দা ফাঁস